বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৩

সাফল্য গাথা - শিশুবিবাহ প্রতিরোধে গুডনেইবারস বাংলাদেশ


আল্পনার আক্তারের গল্প ...



লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা আল্পনার আক্তারের হঠা করে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত থামিয়ে দেয় তার বেড়ে ওঠার স্বপ্ন এবং গুডনেইবারস বাংলাদেশ ঘাটাইল প্রকল্পের শিশু পরিষদের সহযোগীতায় থামানো সম্ভব হয় এই শিশুবিবাহটি।

১২ বছরের শিশু আল্পনা আক্তার, টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার ছোট আইনপুর গ্রামের আরসেদ আলির একমাত্র কণ্যা। ৬ সদস্যের পরিবারে দিন মজুর বাবাই একমাত্র উপার্জনের পথ। ‘দিন আনে দিন খায়’ পরিবারে বাবা যেদিন কাজ করতে পারেননা সেদিন তাদের হয়তো না খেয়েই দিন কাটাতে হয়। আল্পনার মা ঝর্ণা খাতুন ও অনেকদিন ধরে মেরুদন্ডের ব্যাথায় ভুগছেন। সবকিছ মিলিয়ে পড়াশোনা শিখে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবার প্রবল ইচ্ছাটা যেন আল্পনার দিনদিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। “পরিবারের মুখে ৩ বেলা খাবার দিতেই আমার খুব কষ্ট হয়, সেখানে আবার মেয়ের পড়াশোনা চালামু কেমনে”- চোখে মুখে হতাশা নিয়ে বলেন আল্পনার বাবা ।
আল্পনার পড়ালেখা শেখার অদম্য আগ্রহকে জাগিয়ে রাখতে এবং তার স্বপ্নকে পুরন করতে তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় গুডনেইর্বাস বাংলাদেশ ঘাটাইল সু-প্রতিবেশী স্কুল। এর প্রতিদান সরূপ ২০১২ সালের জেএসসি পরীক্ষায় সবাইকে একটি ভাল ফলাফল উপহার দেয় সে। গুডনেইর্বাস এর হাত ধরে তার স্বপ্নগুলো পূরনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছিলো আল্পনা। কিন্তু হঠা করে তাকে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত তার এগিয়ে চলাটা থামিয়ে দেয়। গুডনেইবারস বাংলাদেশ ঘাটাইল প্রজেক্ট এলাকার মানুষের কাছ থেকে তার বিয়ের ব্যাপারটি জানতে পারে। তাক্ষণিকভাবে ঘাটাইল শিশু পরিষদের সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যরা আল্পনাদের বাড়ীতে যায় ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে বাল্যবিবাহের আইনি শাস্তি এবং শারীরিক ক্ষতি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং আল্পনার বিয়ে বন্ধের জন্য বাবা-মাকে অনুরোধ করেন। তার বাবা-মা বুঝতে পারেন যে তারা তাদের মেয়েকে মৃত্যূর দিকে ঠেলে দিচ্ছিলেন। সবার প্রচেষ্টায় শিশুবিবাহটি রোধ করা সম্ভব হয়।
কিন্তু দারিদ্রতা সুবিবেচনাকে গ্রাস করে ফেলে। সেপ্টেম্বর মাসের দিকে আবারও তার বাবা তার এক আন্তীয়ের ছেলে সাথে ২৭ সেপ্টেম্বর তার বিয়ে ঠিক করে। “আর্থিক সমস্যার কারনে মেয়েকে বিয়ে দিতে চাই। সংসারে আমি মেয়েকে ঠিকমতো ভরন-পোষন করতে পারছিলাম না। বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েও সুখে থাকলো, আমারও খরচ কিছু কমলো।” বলেন আল্পনার বাবা। সংবাদটি জানার সাথে সাথে ঘাটাইল  শিশু পরিষদের সদস্যরা তার বাসায় যায়। তাকে বোঝানো হয় আল্পনার এই বয়সে বিয়ে দেয়াটা সমস্যার সমাধান নয় বরঞ্চ তাকে মৃত্যূর দিকে ঠেলে দেওয়া। নিজেদের ভূল বুঝতে পেরে তার মা আমাদের বলেন - “আল্পনার বাবা বেশি কাজ করতে পারে না বিধায় আমাদের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হত। তাই তাকে আমরা বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। আমরা বিরাট একটা ভূল করতে যাচ্ছিলাম। ভাগ্য ভাল যে, লোকজন এসে সেদিন আমাদের বিষয়টা বুঝিয়ে বলেছিল। তা-না হলে হয়তোবা এতদিনে আমার মেয়ের সর্বনাশ হয়ে যেতো ।”
বর্তমানে আল্পনা গুডনেইর্বাস বাংলাদেশ ঘাটাইল প্রকল্পের সহযোগীতায় পূর্বের ন্যায় নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসছে ও তার স্বপ্ন পুরনের পথে এগিয়ে চলছে।
      

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন