সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৩

একটি সাফল্য গাথা


 সবজী চাষ করে স্বাবলম্বী ময়না বেগম
 
দোহার উপজেলার কুসুমহাটি ইউনিয়নের বাবুডাঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা ময়না বেগম (৩৫)। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। বড় মেয়ে আঁখি আক্তারের (২০) বিয়ে হয়েছে প্রায় ০২ বছর আগে এবং ছোট ছেলে জসীম হোসেন (১৩) পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। জসীম গুডনেইবারস্ দোহার প্রজেক্টের একজন আইডি শিশু (বিজিডি-০১১৫-সি-০০২৭২) হিসেবে অর্ন্তভ’ক্ত হয় প্রায় ০৩ বছর পূবে। ময়না বেগমের স্বামী শেখ আক্কেল আলী (৪৫) একজন প্রান্তিক কৃষক। নিজের সামান্য জমি ও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে। এ দিয়ে যে আয় হয় তা দিয়ে অনেক কষ্ট করে সংসার চলছিল।
আইডি শিশুর মা হিসেবে ময়না বেগম ২০১২ সালের মে মাসে গুডনেইবারস্ দোহার সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি লিঃ এর সদস্য হয়। তার সদস্য সংখ্যা ১১৭। সমিতিতে মোট সঞ্চয় জমা দিয়েছে ১৫০০ টাকা।  সদস্য হবার পর থেকে ময়না বেগম নিয়মিত প্রতিনিধি দলের মাসিক সভায় অংশ গ্রহণ করে। এই সভা থেকে সে জানতে পারে যে, গুডনেইবারস্ দোহার সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি লিঃ অল্প সেবামূল্যে ঋণ কার্যক্রম শুরু করেছে। এরপর সে তার স্বামীর সাথে পরামর্শ করে ১ম ধাপে ঋন গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১ম দিকে তার স্বামী ঋণ গ্রহন করতে আগ্রহী না হলেও সবকিছু বিস্তারিত জানার পর ঋণ গ্রহনের অনুমতি দেয়। ময়না বেগম সমিতির অফিস থেকে ঋণের বিস্তারিত জেনে তার স্বামীকে বলেন যে ”সমিতি থেকে ৫০০০ টাকা ঋণ নিলে প্রতি মাসে একবার সর্বমোট ১২ মাসে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সেবামূল্য দিতে হবে ক্রমহ্রাস পদ্ধতিতে মোট ৩৩৬ টাকা। আমার জানা মতে এত সহজ পদ্ধতি এবং কম সেবা মূল্য অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে নেই। সবচেয়ে বড় লাভ হচ্ছে সেবামূল্যের একটি অংশ সমিতি সদস্য হিসেবে আমি নিজেও পাব একসময়।”
ময়না বেগম ২০১৩ সালের মার্চ মাসে ৫০০০ টাকা ঋণ গ্রহন করে নেয়। এই টাকা নিয়ে সে কয়েক ধরনের শাক-সবজির বীজ ও চারা এবং জৈব সার ক্রয় ও মাচা তৈরি জন্য ব্যয় করে। ময়না বেগম তার বাড়ি সংলগ্ন ০৬ শতাংশ জমিতে পুঁইশাক, বেগুন, দুন্দুল ও ঝিঙ্গে সবজির বাগান করেছে। সে নিজে ও তার স্বামী একসাথে এই সবজীর বাগানে কাজ করে। ভালভাবে সবজী বিক্রি শুরু হয় গত জুন মাস থেকে। তার স্বামী নিকটস্থ বাসতা ও কাচারি ঘাট বাজারে নিয়ে বিক্রি করে। এ যাবৎ প্রায় ০৮ হাজার টাকার সবজী বিক্রি হয়ে গেছে। তার প্রত্যাশা আগামীতে আরও প্রায় ১০ হাজার টাকার সবজী বিক্রি করা যাবে। ময়না বেগমের পরিবারের দৈনন্দিন খরচ ও ছেলের লেখাপড়ার ব্যয় এখন সবজী বিক্রির টাকা থেকে নির্বাহ হয়। সে নিয়মিত ঋনের মাসিক কিস্তি ও সঞ্চয় সমিতিতে জমা দেয়। সংসাসের অভাব ও অনটন এখন নেই বললেই চলে।
ময়না বেগমের তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, ”আগামীতে গুড নেইবারস্ দোহার সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি থেকে ২য় ধাপে ১০,০০০ টাকার ঋণ নিয়ে আরও বড় পরিসরে বেশি জমিতে সবজীর চাষ করব। স্বামী স্ত্রী দুইজনে আমরা একসাথে কাজ করে সংসারের উন্নতি করতে চাই এবং আমার ছেলেকে উচ্চ শিক্ষাই শিক্ষিত করব। সবশেষে, আমি গুডনেইবারস্ দোহার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিকে ধন্যবাদ জানাই ও এই সমিতির উত্তরোত্তর উন্নতি কামনা করি।”

বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৩

রিয়া বেগমের গল্প - আশ্রয়হীনদের জন্য গুডনেইর্বাস বাংলাদেশের গৃহনির্মান

 একটি বাড়ি এবং দুশ্চিন্তামুক্ত ভবিষ্যত


স্বামীর সংসার থেকে বিতাড়িত পরের বাড়িতে আশ্রিতা রিয়া বেগমের জন্য মাথা গোজার জন্য একটি বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে গুডনেইর্বাস বাংলাদেশ মৌলভীবাজার সিডিপি।
মাথা গোজার স্থান বলতে তার ছোট একটি বাড়ি ছিল কিন্তু সেটা নদী গর্ভে বিলীণ হয়ে যায় অনেকদিন আগে।তারপর থেকে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন একটু আশ্রয়ের জন্য। কেও হয়ত দয়া  করে করে কয়েকদিনের জন্য থাকতে দিতো। কিছুদিন পর আবার তাকে নতুন আশ্রয় খুজতে বের হতে হতো। প্রতিটি রাত কাটতো সন্তান নিয়ে কাল কোথায় আশ্রয় হবে এ দুশ্চিন্তায়। মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা আয় হতো তাই দিয়ে কোন রকম দুবেলা হয়ত খাওয়া জুটতো  কিন্তু স্থায়ী একটি  বাড়ির কথা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। যা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি তাই বাস্তবে রুপ দিলো গুডনেইর্বাস বাংলাদেশ। সমবায় সমিতির তত্তাবধানে তাকে তৈরি করে দেওয়া একটি বাড়ি। সন্তান নিয়ে এখন তিনি সে বাড়িতেই আছেন। আগের মত কাল কোথায় আশ্রয় হবে এ দুশ্চিন্তা করতে হয়না। সারাদিন মানুষের বাড়িতে কাজ করে রাতে স্বস্তিতে ঘুমাতে পারেন। মুখে আনন্দের হাসি নিয়ে রিয়া বেগম বলেন, “ এখন আমি আর আমার সন্তানের মাথার উপরে একটা আশ্রয় আছে।” উক্ত এলাকার চেয়ারম্যান সহ এলাকাবাসী গুডনেইর্বাস বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে গুডনেইর্বাস বাংলাদেশ




শারমিনা এখন বাল্য বিবাহের সর্বনাশী থাবা হতে মুক্ত

গুডনেইর্বাস বাংলাদেশ মেহেরপুর সিডিপির সহায়তায় এবং স্থানীয় প্রশাষনের হস্তক্ষেপে বাল্য বিবাহের কড়াল গ্রাস হতে রক্ষা পেল ১০ বছরের শারমিনা খাতুন

শারমিনা খাতুন, গুডনেইর্বাস বাংলাদেশ মেহেরপুর সিডিপির একজন স্পন্সর শিশু এবং জয়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী আরো দশজন সাধারণ শিশুর মত সেও স্বপ্ন দেখতো লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হওয়ার হঠাৎ করে তার  বিয়ের সিদ্ধান্তে থমকে গেল তার অনেক দূরে যাওয়ার স্বপ্ন দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত শারমিনার সদস্যের পরিবারে তার লেখাপড়াটা ছিল একটি বোঝার মত ছেলে পক্ষ থেকে চাওয়া যৌতুকের পরিমাণ অল্প হওয়ায় তার বাবা-মা তাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল চাইল্ড কাউন্সিলর পেসপ্ শিক্ষকের মাধ্যমে মেহেরপুর সিডিপি এই সর্বনাশী সিদ্ধান্তের কথা জানতে পারে তাৎক্ষনিকভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার পেস্প শিক্ষক চাইল্ড কাউন্সিলররা তার বাড়ি যায় এত অল্প বয়সে মেয়েকে কেন বিয়ে দেওয়া হচ্ছে জিজ্ঞাসা করা হলে তার বাবা বলেন, “ আমরা গরিব মানুষ মেয়েকে বিয়ে দেওয়া আমাদের পক্ষে খুবই কষ্টকর সুযোগ এসেছে তাই আমরা এটা কাজে লাগাচ্ছি তার মা বলেন, “ মেয়ে বড় হয়েছে, তাকে ঘরে রাখাও নিরাপদ নয় উপস্থিত সবাই শারমিনার বাবা-মাকে বাল্যবিবাহের আইনি শাস্তি এবং শারিরীক ক্ষতি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং শারমিনাকে বিয়ে না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান তারা  তাকে বিয়ে না দেওয়ার ব্যপারে সন্মতি জানান কিন্তু কয়েকদিন পরে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে  জানা যায় শারমিনার বাবা-মা তাকে গোপনে বিয়ে দিচ্ছেন 
প্রকল্প থেকে ব্যপারটি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয় তিনি  বিষয়টি থানা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান তার হস্থক্ষেপে স্থানীয় থানার মাধ্যমে গ্রামবাসীর কাছ থেকে মুছলেকা লেখানো হয় যে তারা নিজেরাও বাল্য বিবাহ দিবে না এবং অন্যেদেরকেও বাল্য বিবাহ দিতে দিবে না শারমিনার বাবা-মাও প্রতিজ্ঞা করেন যে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তারা তাকে বিয়ে দেবেননা তারা বুঝতে পারলেন যে তারা তাদের মেয়ের জীবনকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলেন বাল্যবিবাহের কড়াল গ্রাস হতে রক্ষা পেল  শারমিনা এখন সে নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে তার দু-চোখ এখন সপ্ন দেখে সুন্দর আগামীর


শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৩

প্রিয়া খাতুন এর গল্প



 প্রিয়া খাতুন এর চোখে স্বপ্নেরা ঢেউ খেলে যায়


প্রিয়া খাতুন, দেখতে খুব মিষ্টি একটা মেয়ে দেখে বোঝা যায়না প্রকৃতি সব সুন্দরের মাঝেও বড় ধরনের একটি অভাব দিয়েছে মেয়েটিকে শ্রবন শক্তিহীন এই মেয়েটিকে পরিপূর্ণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে  আনার কত স্বপ্নইনা দেখেছে তার বাবা মা কিন্তু অর্থের অভাব যেখানে মুক্তির পথে বাধাঁ হয়ে দাড়াঁয় সেখানে আশা ভঙ্গের হতাশা কতটা জীবন ছাপিয়ে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ওদের দেখলেই তা বোঝা যায় সহজে।ছেলে হলে কথা ছিল, মেয়ে বলে কথা। নোংরা সমাজ গায়ে কালি ছুড়ে দিবে তাতে দ্বিধা কি? মেয়েদের কোন ঘাটতি বলে কথা। সে ঘাটতি প্রকৃতিগত হোক তাতে কি বা আসে যায়।শূণ্যে চোখ রেখে মেয়ের ভবিষ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রিয়ার মা এমনি কথা বললেন সেদিন। এই দুঃসময়ে সহজ-সুন্দর মেয়েটিকে পরিপূর্ণতার আলোয় আলোকিত করতে এগিয়ে আসে যে সেইতো সু- প্রতিবেশী। প্রিয়ার জীবনে এমনি সু- প্রতিবেশী রূপে পাশে এসে দাঁড়ালো গুড নেইবারস্ বাংলাদেশ। মেহেরপুর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের সুবিধাভোগী মেয়ে  প্রিয়া খাতুনের দুই কানের অপারেশনের জন্য ৮০,০০০ টাকার বাজেটই পাশ হল। দুই কানেরই অপারেশন  হল ঢাকাতে। প্রিয়াদের চোখে এখন আলোকিত স্বপ্নের ছোটাছুটি। অবাক বিস্ময় আর পরিপূর্ণ কৃতজ্ঞতায় মন ভরে গেল গুড নেইবারসের প্রতি। ছোট্ট মেয়েটি এখন দুই কানেই শুনতে পায়। দাঁড়িয়ে ছিল মেয়েটি। পিছন থেকে জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছ প্রিয়া ? ঘুরে হেসে সহজেই উত্তর দিল খুব ভাল। ওর চোখে স্বপ্নেরা ঢেউ খেলে যায়। এখন শুধু পরিপূর্ণ জয় আর নিঃসঙ্কোচে ছুটে চলা সামনের দিকে। জয়, প্রাপ্তি শুধু প্রিয়ার নয়, গুড নেইবারসের সবার।