রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৪

“শিশুদের পাশে শিশুরা”

পীরগঞ্জ শিশু পরিষদ সদস্যদের কর্মকাণ্ড

অশিক্ষা, কুসংস্কার এবং প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ এলাকায় বাল্য বিবাহ ছিল একটি নিত্য দিনের ঘটনা। দরিদ্রতার হার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি হওয়ায় পিতা-মাতারা ব্যস্ত পরিবারের সবার মুখে খাবার তুলে দেবার
চিন্তায়। অভাবের সংসারে মেয়ে হয়ে জন্মানো যেন একটি বাড়তি বোঝা হয়ে থাকা। মেয়ের বয়স ১০-১১ বছর হলেই বাবা-মায়েরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাদেরকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। মেয়ের বিয়ে দেওয়া মানে সংসারে খাবারের একটি মুখ কমে যাওয়া। তাছাড়া, বাড়ন্ত বয়সের মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে বাবা-মা দুঃশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে পড়েন। তাই অতি অল্প বয়সেই কন্যা শিশুকে বিয়ে দেওয়া ছিল সে এলাকায় একটি প্রচলিত রেওয়াজ। শুধু অল্প বয়সে কন্যা শিশুদেরকে বিয়ে দেয়া নয়। কন্যা শিশুদেরকে অন্যান্য অধিকারের ব্যাপারেও তারা ছিল যথেষ্ট উদাসীন। খুব কম পরিবারই ছিল যারা স্বেচ্ছায় তাদের সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠাতো। এছাড়া শিশুদেরকে দেশের একজন নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠতে হলে তাদের জন্ম নিবন্ধন বিষয়ে তারা ছিল সম্পূর্ণ অসচেতন।
পলাশি, নিতু, জহরুল, তমিনুলসহ মোট ৯জন শিশু এগিয়ে এসেছে পীরগঞ্জ এলাকায় শিশু বিবাহ বন্ধ, শতভাগ জন্ম নিবন্ধনসহ শিশুদের অন্যান্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। তারা সবাই গুডনেইর্বাস বাংলাদেশের পীরগঞ্জ প্রকল্পের শিশু পরিষদের সদস্য। এ ধরনের ঘটনা যখনই তারা শুনতে পায়, তখনই তারা সেই স্থানে ছুটে যায় শিশু বিবাহ ঠেকাতে। প্রকল্পের কর্মী, এলাকার গণ্যমান্য অভিভাবকদের সাহায্য নিয়ে কন্যা শিশুর বাবা-মাকে শিশু বিবাহের শারীরিক, মানসিক এবং অন্যান্য ক্ষতিকর দিকগুলো বোঝানোর চেষ্টা করে।
প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে শিশুদের জন্ম নিবন্ধনে সহায়তা করে।  প্রকল্প থেকে আয়োজিত বিভিন্ন ক্যাম্পেইন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা শিশু বিবাহ বন্ধ করা, শতভাগ জন্ম নিবন্ধন এবং অন্যান্য শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতন করে থাকে। তাদের চেষ্টার ফলে এলাকায় এখন শিশু বিবাহের হার প্রায় শূন্যের কোটায় এবং শতভাগ জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত হয়েছে।
তাছাড়া বাবা-মায়েরা এখন শিশুদের অধিকারের ব্যাপারে অনেক সচেতন। “এত অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে আমি আমার মেয়েকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলাম। শিশু পরিষদের সদস্যরা আমার চোখ খুলে দিয়েছে। এখন আমি আমার মেয়েকে অবশ্যই উপযুক্ত বয়স হইলে বিয়ে দিব”- এ কথা বলেন, অল্প বয়সে বিয়ে দিতে যাওয়া এক অভিভাবক সীমার বাবা।
শিশু পরিষদে একত্রে কাজ করার ফলে তারা যেমন বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত হয়েছে, তেমন তাদের নেতৃত্বদানের গুণাবলীয়ও বিকশিত হয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুদের জন্য কিছু করতে পেরে তারা খুশি। পরিষদ সভা নেত্রী পলাশী আাক্তার বলন “আমাদের মতো সবাই যদি শিশুদের দিকে এগিয়ে আসে, তবে শিশুরা সুস্থ ও সুন্দরভাবে দেশে সু-নাগরিক হয়ে বেড়ে উঠার সুযোগ পাবে।”

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৪

গুডনেইবারস বাংলাদেশের বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম



গুডনেইবারস বাংলাদেশের বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম 

" লেখাপড়ার বয়স নাই, এসো সবাই শিখতে যাই "

হিমেল নিভা সরকার
অপারেশনাল সিনিয়র ম্যানেজার

শিক্ষা ছাড়া ব্যক্তি তথা জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়, একথা সর্বজন বিদিত এই সত্যকে উপলব্ধি করে, গুডনেইবারস বাংলাদেশ বিগত ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন কর্ম এলাকার স্পন্সর শিশুর মায়েদের নিয়ে বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে যার প্রধান লক্ষ্য হলো সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর করে নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি দক্ষতা উন্নয়ন করা

শিক্ষা ছাড়া কখনই পরিবার দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব নয় পরিবারে কেবল মাত্র শিশুদের শিক্ষা প্রদান করলে চলবে না শিশুর অভিভাবকদের বিশেষ করে মায়েদেরও শিক্ষা প্রদান করা প্রয়োজন এরই লক্ষ্যে (জিএনবি) শুরু করেছে এই বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম মায়েরা নিজ পরিবার পরিচালনা করার পাশাপাশি অল্প সময় বের করে নিয়ে যদি লেখাপড়া করে, তাহলে তারা নিজের জীবনের পাশাপাশি নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যৎও সুন্দরভাবে গঠন করতে সক্ষম হবে বলে গুডনেইবারস মনে করে
যে সকল শিশুর অভিভাবক যারা সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কখনো লেখাপড়া করেননি অথবা স্কুলে ভর্তি হয়েও কোর্স শেষ করতে পারেননি তাদের স্বাক্ষর করাই হলো এই শিক্ষা কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য আশা করা যায়, অতি সহজে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে প্রতিটা বয়স্ক শিক্ষার্থী এই র্কোস সমাপ্ত করতে সক্ষম হবেন এবং নিজেই নিজের নাম, ঠিকানা লেখতে বলতে পারার সাথে সাথে সাধারণ হিসাব করতে সক্ষম হবেন যার মাধ্যমে দেশে থেকে অনেক নিরক্ষরতার হার কমে গিয়ে মানুষ কিছুটা হলেও শিক্ষিত হয়ে উঠবে
২০১৩ সালে গুডনেইবারস ২০টি বয়স্ক সেন্টার পরিচালনা করে জানু-ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩২৫ জন বয়স্ক মহিলা এই কেন্দ্র থেকে বয়স্ক শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং অত্যন্ত সফলতার সাথে তা শেষ করেন বর্তমানে তারা বিভিন্ন স্থানে এই শিক্ষাকে কাজে লাগাচ্ছেন বাহাদীপুর কেন্দ্রের শিক্ষার্থী নূরজাহান বেগম আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেনআমার লেখাপড়ার অনেক ইচ্ছে ছিল কিন্তু তা সম্ভব হয়নি কিন্তু আমি এখন গুনতে পারি কিছু কিছু পড়তে পারি পরিবারে হিসাব রাখার কাজে আমার এই গুনতে পারা অনেক কাজে লাগবে গুডনেইবারস এর কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ আমার চোখ খুলে দেয়ার জন্যহাড়বাড়ি কেন্দ্রের শিক্ষার্থী মরিয়ম বেগম বলেনগুডনেইবারসকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে নতুন পথের আলো প্রদানের জন্য আসলেই আমি এই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছি যে চোখ থাকিতে অন্ধ কাকে বলে আর সার্টিফিকেট পেয়ে আমি খুবই কৃতজ্ঞ আশা করি যে শিক্ষা আমরা এখান থেকে গ্রহণ করেছি তা আমরা জীবনে চলার পথে কাজে লাগাতে সক্ষম হবো